সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক :বরিশাল সিটি কর্পেোরেশনের মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেনী ষ্টাফ কোয়ার্টারে অবৈধভাবে ভাড়া দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারি মিলন ও তার ভাই দোলন। তাদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালাম।এর মধ্যে মিলনের ভাই দোলন হাসপাতালের কোন কর্মচারি না হয়েও কেবল ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটে তিনিও সরকারি বাসা অবৈধভাবে দখলে রেখেছে।
এখানেই শেষ নয়,চতুর্থ শ্রেনী ষ্টাফ কোয়ার্টারের সামনের সরকারি পুকুর মাত্র এক বছরের জন্য লিজ নেয়ার নাম করে বছরের পর বছর ধরে বিনা অনুমোদনে কেবল ক্ষতার দাপটে এখনও মাছ চাষ কতরে বছরে লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হারাচ্ছে রাজস্ব। ইতিপূর্বে বহু বছর যাবত পিতার চাকরির সুবাতে উপাধ্যক্ষের বাসভবন দখল করে বসবাস করেছিল। সেখানে চলতো রমরমা মাদক ব্যবসা। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকায় সাধারনত ওইদিকে কারও নজরে পরতোনা।
পরে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করার পরে ওই বাসভবন থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। সেখান থেকে উচ্ছেদ এবং পরবর্তীতে মিলনের চাকরির সুবাদে বর্তমানে আবারও বেপয়োড়া হয়ে উঠেছে এই দুই ভাই দোলন-মিলন। অনুসন্ধানে জানা গেছে,প্রথমে এই দুই সহোদরের পিতা সাহেবআলী ছিল হাসপাতালের চতুর্থশ্রেনী কর্মচারি কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক। সেই সুবাদে তার দুই ছেলে মিলন এবং দোলন হাসপাতালে শুরু করে রোগী এবং ডাক্তারদের দালালি।
ওষুধ চুরি থেকে শুরু করে রোগীর দালালি এখন তার প্রধান কাজ এ কাজকে তরান্বিত করতে ইতোমধ্যে মেডিকেলের সামনে প্রতিষ্ঠিত ডক্টরস ল্যাব নামক একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। সেখানে হাসপাতালে দুর দুরান্ত থেকে আগত অসহায় রোগীদের ভাগিয়ে নেয়া এখন তার প্রধান কাজ।
পাউবোর জমি অবৈধভাবে দখল করে করে ত্রিশ গোডাউন এলাকার প্রবেশ পথে গড়ে তুলেছে ডেন্টাল ক্লিনিক, একই যায়গায় তৈরী করেছে একটি খাবার রেষ্ট্রুরেন্ট ও হোটেল। ওই স্থানটি অবৈধভাবে দখল করার পরে পাউবো কর্তৃপক্ষ অবহিত হবার পরে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করার জন্য নোটিশ প্রেরন করে । তবে, কোন এক অদৃশ্য হাতের ইশারায় পাউবোর উপর মহলকে ম্যানেজ করে পুর্নরায় পাকা স্থাপনা তৈরী করেছে। সরকারি বিধি মোতাবেক চাকরি প্রাপ্তির তিন বছর অতিবাহিত হবার পরে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদনের প্রেক্ষিতে কোয়ার্টার বরাদ্দ পেতে পারে ।
তবে এ ক্ষেত্রে সম্পুর্ন বিধি লংঘন করে মিলন দুই বছরের আগেই ৯নং কোয়ার্টরের নিচতলা তার দখলে নিয়ে নেয়। সাথে তার ভাই দোলনকে ৭নং কোর্য়াটারে দখল বুঝিয়ে দেয়। এখানেই শেষ নয় তারা ওইসব কক্ষের কোন ভাড়া সরকারি কেষাগারে জমা দেয়না। এছাড়া এলোটমেন্ট ছাড়া ৬ নং কোয়ার্টারের দ্বিতীয় তলায় কর্মচারি সোহরাব দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছে। বহিরাগত হিসাবে মিলনের ছত্রছায়ায় ৬ নং ভবনের দ্বিতীয় ৪/৫ বছর যাবত বিনা ভাড়ায় অবস্থান করছে রিংকু নামের এক বহিরাগত । তার নিকট থেকে মাসিক ৩/৪ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করে মিলন।
আরেক বহিরাগত সজিব নামের এক চটপটি বিক্রেতা মিলনের নিকট থেকে বরাদ্দ নিয়ে ৬ নং ভবনে কয়েক বছর পর্যন্ত অবস্থান করছে। চতুর্থশ্রেনী কোয়ার্টারের প্রবেশ পথে অবৈধ ভাতের হোটেলের মালিক আবুল মিলনের নিকট থেকে ১নং ভবনে অবস্থান করছে। তার ভাতের হোটেল এবং বাসা ভাড়া দুটোর অর্থই হাতিয়ে নেয় মিলন। এম্বুলেন্স চালক লিটন ১ নং ভবনে বহিরাগত হয়েও কর্মচারিদের ন্যায় বসবাস করছে। নতুন চাকরিপ্রাপ্ত তুষার,হ্রদয়সহ মোট তিনজন ৮ নং ভবনের তিনতলায় কোন এলোটমেন্ট ছাড়াই বিনা ভাড়ায় বসবাস করছে। এদর নিকট থেকে মিলন মাসিক ভাড়া উত্তোলন করে বলে বিস্বস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছে। আরেক বহিরাগত লুৎফর ৮ নং ভবনে মিলনকে ম্যানেজ করে অবস্থান করছে।
এনায়েত নামের এক কর্মচারি অবসরে গিয়ে মারা যাবার পরেও তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই কোয়ার্টারে অবস্থান করছে। খোজ নিয়ে জানা গেছে লিটন তার ভাড়ার টাকা প্রদান করে ওয়ার্ড মাষ্টার কালাম এর নিকট। মাস খানেক পূর্বে ওয়ার্ড মাষ্টার আবুল কালামকে অন্যত্র বদলি করার কারনে মিলনের আরও পোয়াবারো হয় কালাম যেসব ব্যাক্তিদের নিকট থেকে বখরা এবং অবৈধ ভাড়া উত্তোলন করতো তার সব দ্বায়ীত্ব হাতে নেয় মিলন। এখন সমপুর্ন কোয়ার্টার তার দখলে চলে গিয়েছে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রপ্ত সুত্র মতে চতুথৃ শ্রেনী কোয়ার্টারে মোট ১০৮ টি ফ্লাট রছে এর মধ্রে মাত্র তেত্রিশটি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কর্মচারিরা বসবাস করছে বাকি সবগুলোই মিলনের কব্জায় রয়েছে । যা থেকে প্রতি মাসে কম করে হলেও লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মিলন।
ইতোপূর্বে এই বিষয়ে স্থানীয় পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ পেলে কর্তৃপক্ষ তরিঘরি কতরে কিছুদিনের জন্য অবৈধ বসবাসকারিদের হটিয়ে দিলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে পুনুরায় দখরবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
স্থানীয়রা জানায়, কোয়ার্টারের প্রবশ পথে বহু অবৈধ দোকান জেলা প্রশাসনের সহায়তায় বহুবার উচ্ছেদ করা হলেও বর্তমানে মিলনের প্রত্যক্ষ মদদে আবারও একাধিক অবৈধ খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন দোকানঘর তুলে চলাচলের রাস্তা আটকিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দিচ্ছে মিলন।এইসব অবৈধ বসবাসকারিরা প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকার বিদ্যুৎ ফাকি দিচ্ছে যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করে আসছে সেইসাথে রয়েছে ত্রৈমাশিক পানির বিলের অর্থ।
খোজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মিলনের হাসপাতালে কোন ডিউটি নেই, কেবল ঘোড়াফেরাই মুল কাজ, জানতে চাইলে মিলন বলেন, আমি পরিচালকের ব্যাক্তিগত কাজ তদারকি করি। তাছাড়া,নিজেকে সব সময় বিসিসি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর একান্তভাজন বলে পরিচয় দেয়,ফলে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়না। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মোঃ বাকির হোসেন এর সাথে একাধিকবার সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
উপ-পরিচালক ডাঃ আবদুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি পরিচালক অবহিত রয়েছে, তিনি ইতিপূর্বে কোয়ার্টার এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। তবে, তার পরবর্তীতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানা যায়নি। এ বিষয়ে কর্মচারি মিলনের নিকট জানতে চাইতে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেননা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
Leave a Reply